নটরাজ মন্দিরের মেইন গেট থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে একটা ছোটখাটো জটলা হঠাৎ করে জমে গেলো...একজন ভক্ত মন্দির থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হেঁটেই উপুড় হয়ে পড়লো আর ওঠেনি, স্পট ডেথ। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে দশটা, অফিস টাইমের জনবহুল রাস্তা, চট করে তাই পথচলতি অনেকেরই চোখে পড়েছে। ভিড়ের মধ্যে কেউ অ্যাম্বুলেন্স কেউ মৃতের আইডেন্টিটির জন্য শশব্যস্ত হয়ে উঠলো ।
বছর উনিশের এক যুবতী ভিড়ের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলো, কারুর চোখে পড়লো না ।
বিকালের আজানের সুর ভেসে আসছে। রাস্তায় ভিড় এখন খুব বেশি নয় ।
সূর্য প্রায় ডুবে গেছে --- ঘড়িতে পৌনে ছ'টা বাজলো । মসজিদ থেকে লোকটা বেরিয়ে এলো কাঁপতে কাঁপতে বুকে হাত চেপে । কয়েক সেকেন্ড পরেই উপুড় হয়ে পড়ে ছটফট করে লাগলো । লোকজন ছুটে এসে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হসপিটালে পাঠালো। তারপর.... ভোররাতে সব শেষ ।
হসপিটালে বেডের পাশে ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির সাথে লোকটার ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে চলে যাওয়াটা উপভোগ করছিল।
"কিভাবে সম্ভব?এমনও হয়? সত্যিই বড় বিচিত্র এই বিশ্ব"--- ষ্টাডিরুমের চেয়ারে ঠেস দিয়ে বসে আপনমনেই বললো কথাগুলো সত্যজিৎ।
সত্যজিৎ বিশ্বাস,পরিচিতেরা "সত্য বিশ্বাস" বলে ডাকে। সত্যজিতের নিজের একটা স্কুল রয়েছে, স্টুডেন্টদের ড্রইং এবং ক্রাফট এর কাজ শেখায় যত্ন সহকারে । এছাড়া একটা প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সির সাথে সে যুক্ত হয়েছে দু'বছর ধরে। দু'য়েকটা কেস সলভ করে পুলিশকে সাহায্য করে নামডাকও হয়েছে বেশ।
শহরে পরপর দু'দিন দুটো অস্বাভাবিক মৃত্যু ভাবিয়ে তলেছে পলিশ এবং গোয়েন্দা দপ্তরকে। পেপারে হেডলাইন পড়েই সত্য লোকাল থানায় কল করলো -
"হ্যা হ্যা ভায়া আমরা এখুনি তোমার কথাই আলোচনা করছিলাম। নাম নিতেই তুমি হাজির। তা বলো কী ব্যাপারে?"
"ওই জোড়া অস্বাভাবিক মৃত্যু, ওটার ব্যাপারেই কদ্দুর এগোলেন?
"তেমন কিছু হাতা-মাথা পাচ্ছিনা বলেই তো তোমাকে তলব করবো ভাবছিলাম । যদ্দুর জানতে পেরেছি প্রথম ব্যাক্তির নাম রামেশ্বর ভট্টাচার্য, কাঠ-ব্যবসায়ী, ৩টে বড় কাঠের গোলার মালিক । এছাড়াও মনিরাম স্ট্রিটের অ্যান্টিক শপটাও ওনারই। স্ত্রী,দুই ছেলে আর চাকর-বাকর নিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট ফ্যামিলি। ভদ্দরলোক সংস্কারি, শিবভক্ত । পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে বডিতে একোনাইট পাওয়া গেছে। কিন্তু কিভাবে এলো সেটাই চিন্তার বিষয়।"
"এ...কো..না...ই..ইট ন্যাপ! মন্দিরের প্রসাদে ছিল কি? খোঁজ নিয়েছেন!
"না আজ সকালেই রিপোর্ট এলো । তুমি তাহলে চলে এসো থানায় এখুনি। সবাই মিলে ঢু মেরে আসি মন্দিরে।"
"ওকে আসছি। গিয়ে সেকেন্ড মৃত্যুর ব্যাপারে শুনবো।"
নটরাজ মন্দিরের সকালের পুজো সবেমাত্র শেষ হয়ে ভোগ বিতরণের আয়োজন চলছে। সত্য আর দারোগা প্রিয়তোষ তপাদার প্রধান পুরোহিতকে একপাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। "ওইদিন ক'টা নাগাদ রামেশ্বর ভট্টাচার্য মন্দিরে এসেছিলেন?
"আজ্ঞে, উনি তো প্রতিদিনই গোলায় যাবার আগে মন্দিরে আসতেন ৯টা সাড়ে ৯ টায়। দিয়ে কোনোদিন প্রণাম করেই চলে যেতেন,কোনোদিন আবার পুজো দিয়ে খানিক বসে ১০ টায় যে ভোগ বিতরণ হয় তা খেয়ে যেতেন। পরশুদিন এলেন, কিছুক্ষন বসলেন, তবে ভোগ নিলেন না, স্নান জল পান করেই চলে গেলেন তাড়াহুড়ো করে আর তারপরেই তো দেখি ঐ কাণ্ড।"
"আচ্ছা ওই পাত্রের স্নান জল আর কেউ খায়নি?"
"হ্যাঁ, জনা কুড়ি ভক্ত ছিল। সবাইকেই নিজে হাতে করে দিয়েছিলাম । কই কিছু হয়নি তো,দিব্যি সুস্থ আছে সব। "
সত্য উঠে গিয়ে স্নানজলের পাত্র,পুজো সরঞ্জাম সব নিরীক্ষণ করে এলো। "নাহহ...সবই ঠিক আছে। রিপোর্টে শরীরে বিষ ঢোকার যে টাইমের উল্লেখ আছে সেসময়টুকু রামেশ্বরবাবু মন্দিরে ছিলেন। তাহলে বিষ এলো কোথা থেকে?" চিন্তায় ৩ টে ভাঁজ ফুটে উঠলো কপালে।
প্রিয়তোষবাবু, সত্য আর কনস্টেবল দু'জন মন্দির থেকে বেরিয়ে জিপে গিয়ে উঠলো । "এবার কোথায় যাবেন ?" "থানাতেই ফিরি..."
"আরেকজন কীভাবে মরেছেন?"
"উনি জসীমউদ্দীন শাহ্ টমসন স্ট্রিটে জুয়েলারির বড় শোরুম রয়েছে আর পারিবারিক সম্পত্তি, চাষাবাদের জমি রয়েছে অনেকটা । বাড়িতে স্ত্রী,এক ছেলে,আর অবিবাহিত দু'ভাই আছে । ভাইরা জমিজমা দিকটা দেখে।"
"মৃত্যুর কারণ খুঁজে পেলেন?"
"ডক্টর তো হার্ট অ্যাটাক বললেন সেইমত ট্রিটমেন্ট করছিলেন কিন্তু একজন সুস্থ মানুষের হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের কারণ জানা যায়নি এখনো। দেখা যাক রিপোর্ট কী বলে।"
"মসজিদে কি কোনো উত্তেজক ঘটনা !!... আচ্ছা গাড়িটা ঘুরিয়ে চলুন তো ওদিকে একবার।"
(চলবে...)